সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঘরে বসে নিজেই চার্জার ফ্যান তৈরি করুন

                   একটি চার্জার ফ্যান তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন

 

ফ্যান হাবর্তমানে লোডশেডিং আমাদের জীবনের এক নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। গরমের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে ঘরে থাকা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তখন যদি একটা ছোট চার্জার ফ্যান বা ব্যাটারি চালিতে থাকে, তাহলে অনেকটাই স্বস্তি পাওয়া যায়। বাজারে অনেক ধরণের চার্জার ফ্যান পাওয়া গেলেও আপনি চাইলে নিজেই একটা চার্জার ফ্যান তৈরি করতে পারেন। এতে খরচ কম হবে এবং আপনার ইলেকট্রনিক্স জ্ঞানও বাড়বে।

এই  আমরা অধ্যায়ে জানবো:

  • চার্জার ফ্যান কী?

  • এটি কিভাবে কাজ করে?

  • একটি চার্জার ফ্যান তৈরি করতে যেসব যন্ত্রাংশ দরকার

  • ধাপে ধাপে তৈরি করার পদ্ধতি

  • কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

চার্জার ফ্যান কী?

চার্জার ফ্যান হলো একটি পোর্টেবল ফ্যান যা ব্যাটারির মাধ্যমে চলে। এটি সাধারণত রিচার্জেবল ব্যাটারি দিয়ে চলে এবং চার্জ শেষ হয়ে গেলে পুনরায় চার্জ করেও ব্যবহার করা যায়। অনেক সময় এই ধরনের ফ্যানে সৌর প্যানেল (সোলার প্যানেল) দিয়েও চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে।

একটি চার্জার ফ্যান তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন

নিচে একটি সাধারণ চার্জার ফ্যান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। এই ফ্যানটি ঘরে বসেই বানানো যাবে এবং ছোট একটি চার্জার দিয়েই চার্জ দেওয়া সম্ভব হবে।

১. ডিসি মোটর (DC Motor)

  • ভোল্টেজ: ১২V অথবা ৫V (ব্যবহারযোগ্য ব্যাটারির ওপর নির্ভর করে)

  • গতি: ১০০০ RPM – ৩০০০ RPM পর্যন্ত

  • বাজারে সহজলভ্য

২. ফ্যান ব্লেড

  • ছোট বা মাঝারি আকারের প্লাস্টিকের ব্লেড

  • আপনি চাইলে পুরাতন খেলনা অথবা পুরনো ফ্যান থেকেও এটি সংগ্রহ করতে পারেন

৩. ব্যাটারি

  • লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি (৩.৭V ১৮৬৫০ সেল) অথবা ১২V লিড-অ্যাসিড ব্যাটারি

  • ব্যাটারি ক্যাপাসিটি: ২০০০mAh থেকে শুরু করে ১০০০০mAh পর্যন্ত

৪. চার্জিং সার্কিট / ব্যাটারি চার্জার বোর্ড

  • TP4056 মডিউল (৩.৭V ব্যাটারির জন্য)

  • DC-DC Boost Converter (যদি ভোল্টেজ বাড়াতে হয়)

৫. সুইচ (Switch)

  • অন-অফ সুইচ

  • চাইলে মাল্টি-স্পিড সুইচও ব্যবহার করতে পারেন

৬. ফ্রেম / বডি

  • কাঠ, এক্রিলিক বোর্ড, পুরাতন ফ্যানের কেসিং, কিংবা ৩D প্রিন্টেড প্লাস্টিক বডি

  • ফ্যানটিকে স্থিরভাবে বসানোর জন্য প্রয়োজন হবে

৭. ওয়্যারিং ও কানেকশন

  • তার (Wire)

  • সোল্ডারিং আয়রন ও সোল্ডারিং ওয়্যার (যদি স্থায়ীভাবে সংযোগ করতে চান)

  • ইন্সুলেশন টেপ বা হিটশ্রিংক টিউব

৮. ইউএসবি চার্জার (অপশনাল)

  • যদি আপনি ফোন চার্জারের মাধ্যমে এটি চার্জ করতে চান, তাহলে USB ইনপুট দরকার হবে

ধাপে ধাপে চার্জার ফ্যান তৈরি করার পদ্ধতি

ধাপ ১: ডিজাইন ঠিক করা

প্রথমে আপনি কেমন ফ্যান বানাতে চান, তার একটা ধারণা নিন। এটি ডেস্ক ফ্যান হবে না কি দেয়ালে ঝোলানো যাবে, সে অনুযায়ী কাঠামো ঠিক করুন।

ধাপ ২: মোটর স্থাপন

ডিসি মোটরটিকে এমনভাবে ফ্রেমে ফিট করুন যাতে এটি কাঁপাকাঁপি না করে। এরপর ব্লেডটি মোটরের শ্যাফটের সঙ্গে সংযুক্ত করুন। ঠিকঠাক বসছে কিনা দেখে নিন।

ধাপ ৩: ব্যাটারি সংযোগ

ব্যাটারিকে মোটরের সঙ্গে যুক্ত করুন। মাঝখানে একটি সুইচ দিন যাতে চাইলে চালু/বন্ধ করা যায়। ব্যাটারি আর মোটরের ভোল্টেজ মিলে কিনা, তা অবশ্যই নিশ্চিত করুন।

যদি ৩.৭V ব্যাটারি দিয়ে ১২V মোটর চালাতে চান, তাহলে Boost Converter লাগবে।

ধাপ ৪: চার্জিং সার্কিট সংযোগ

ব্যাটারিকে চার্জ দেওয়ার জন্য একটি চার্জিং মডিউল সংযোগ করুন (যেমন TP4056)। এটি ইউএসবি ক্যাবল দিয়ে চার্জ হতে পারে।

ধাপ ৫: নিরাপত্তা ও কভার

ফ্যান ঘুরতে ঘুরতে আঙুলে লাগার ঝুঁকি থাকে। তাই ফ্যানের সামনে ও পেছনে একটি সেফটি গ্রিল বা জাল লাগান। এতে করে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে।

ধাপ ৬: চূড়ান্ত টেস্টিং

সবকিছু যুক্ত হয়ে গেলে ফ্যান চালিয়ে দেখুন। ঠিকমতো ঘুরছে কিনা, বাতাস পাচ্ছেন কিনা, ব্যাটারি চার্জ নিচ্ছে কিনা – এসব যাচাই করুন।

অতিরিক্ত টিপস

  • ফ্যানের ব্লেড হালকা হলে ব্যাটারি দীর্ঘক্ষণ চলবে।

  • চার্জার হিসেবে ৫V ১A USB মোবাইল অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করতে পারেন।

  • লো-ভোল্টেজ কনভার্টার দিয়ে মাল্টি-স্পিড ফ্যান বানানো সম্ভব।

  • সৌর প্যানেল দিয়ে চার্জ দিলে পরিবেশবান্ধব হবে।

কেন আপনি নিজেই চার্জার ফ্যান বানাবেন?

১. অর্থ সাশ্রয়: বাজারের চার্জার ফ্যানগুলো সাধারণত ৮০০–১৫০০ টাকার মধ্যে পড়ে। নিজে বানালে সেটা ৩০০–৭০০ টাকার মধ্যে সম্ভব।

২. ইলেকট্রনিক্স শেখা: একটি বাস্তব প্রজেক্টের মাধ্যমে সার্কিট বোঝার ভালো সুযোগ।

৩. নির্ভরযোগ্যতা: নিজের তৈরি জিনিস ঠিক কিভাবে কাজ করে, আপনি সেটা জানেন। প্রয়োজনে নিজেই ঠিক করতে পারেন।

৪. পরিবেশবান্ধব: আপনি চাইলে পুরনো ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশ রিসাইকেল করে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন।

উপসংহার

চার্জার ফ্যান তৈরি করা একদমই কঠিন কিছু নয়, বরং এটি একটি চমৎকার “Do It Yourself” প্রজেক্ট। আপনি যদি প্রযুক্তি পছন্দ করেন, তাহলে এটি আপনার জন্য মজার এবং শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হবে। ফ্যান বানিয়ে ঘরের মানুষের কষ্ট কিছুটা কমানো গেলে তার চেয়ে আনন্দের কিছু নেই।

আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার কাজে লাগবে এবং আপনি নিজেই একটি চার্জার ফ্যান বানাতে পারবেন। চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে বারবার ঠিক করুন — এক সময় আপনি সফল হবেনই।

মন্তব্যসমূহ

Most Popular Post

৫০০ ওয়াট বাল্ব: এক শক্তিশালী আলোর উৎসের পর্যালোচনা

  ৫০০ ওয়াট বাল্ব: এক শক্তিশালী  আলোর উৎসের পর্যালোচনা আলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। আধুনিক সভ্যতায় আমরা বিভিন্ন ধরনের আলোর উৎস ব্যবহার করে থাকি—যেমন ইনসানডেসেন্ট ল্যাম্প, ফ্লুরোসেন্ট টিউব, LED লাইট ইত্যাদি। এসবের মধ্যে ৫০০ ওয়াটের বাল্ব একটি বিশেষ ধরণের আলো যার ব্যবহার মূলত শিল্পখাতে, স্টুডিওতে, অথবা বড় পরিসরের আলোকসজ্জায় হয়ে থাকে। এ প্রবন্ধে আমরা ৫০০ ওয়াট বাল্বের গঠন, কার্যকারিতা, ব্যবহার, উপকারিতা ও অসুবিধাসমূহ নিয়ে বিশদ আলোচনা করব। বাল্বের গঠন ও প্রকারভেদ ৫০০ ওয়াটের বাল্ব সাধারণত ইনসানডেসেন্ট বা হ্যালোজেন টাইপ হয়ে থাকে। এই বাল্বের ভেতরে টাংস্টেন ফিলামেন্ট থাকে, যা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয় এবং তাপ ও আলো উৎপন্ন করে। হ্যালোজেন বাল্বগুলিতে হ্যালোজেন গ্যাস (যেমন ব্রোমিন বা আয়োডিন) ব্যবহার করা হয়, যা ফিলামেন্টের আয়ু বাড়ায় এবং আলোকে আরও উজ্জ্বল করে। বর্তমানে LED প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বাজারে ৫০০ ওয়াট সমতুল্য LED বাল্বও পাওয়া যায়, যা অনেক কম বিদ্যুৎ খরচে একই পরিমাণ আলো দিতে পারে। আলোর ক্ষমতা একটি সাধারণ ৫০০ ওয়াট ইনসানডেসেন্ট বাল্ব প্রায় ৯৫০০ থেক...

৭ ওয়াট বাল্ব: পরিবেশ বান্ধব

৭ ওয়াট বাল্ব: পরিবেশ বান্ধব একটি স্মার্ট বিকল্প বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ সংরক্ষণ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বৈশ্বিক উষ্ণতা, কার্বন নিঃসরণ, জ্বালানির অপচয় এবং বৈদ্যুতিক শক্তির অপর্যাপ্ততা আমাদেরকে বাধ্য করছে আরও বেশি টেকসই এবং পরিবেশ-বান্ধব পণ্য ব্যবহারের দিকে ঝুঁকতে। এই প্রেক্ষাপটে আলো সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর উপায় হলো ৭ ওয়াটের এলইডি বাল্ব। যদিও এই ছোট বাল্বটি দেখতে সাধারণ, তবুও এর উপকারিতা অনেক বড়। এটি কেবল বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে না, বরং পরিবেশ রক্ষায় একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এই প্রবন্ধে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করব একটি ৭ ওয়াট বাল্ব কীভাবে পরিবেশের উপকার করে, এর কার্যকারিতা, তুলনামূলক বিশ্লেষণ, এবং ভবিষ্যতে টেকসই জীবনের জন্য এর ভূমিকা। ১. ৭ ওয়াট বাল্ব কী? ৭ ওয়াট বাল্ব বলতে সাধারণত একটি এলইডি (LED) বা লাইট এমিটিং ডায়োড প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি বাল্ব বোঝায় যার বিদ্যুৎ খরচ মাত্র ৭ ওয়াট। এটি দিনে প্রায় ৮ ঘণ্টা ব্যবহারের জন্য গড়ে মাত্র ২ কিলোওয়াট ঘন্টা (kWh) বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রতি মাসে। এলইডি বাল্বের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি অল্প বিদ্যুৎ খরচে অধিক আলো সরবরাহ ...

১০০ ওয়াট LED বাল্ব: আলোর ভবিষ্যৎ

  ১০০ ওয়াট LED বাল্ব: আলোর ভবিষ্যৎ ভূমিকা আলো ছাড়া আধুনিক জীবন প্রায় অকল্পনীয়। দিনের পর দিন আমরা আলোর ওপর নির্ভর করে চলি—বাসা থেকে অফিস, রাস্তা থেকে দোকান, হাসপাতাল থেকে শিল্প কারখানা সবকিছুতেই। এক সময় ইনক্যান্ডেসেন্ট ও সিএফএল বাল্ব ব্যবহার হলেও বর্তমানে LED প্রযুক্তি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে “১০০ ওয়াট LED বাল্ব” হল একটি শক্তিশালী ও কার্যকর আলোর উৎস, যা শক্তি সাশ্রয় এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। LED প্রযুক্তি: মূল ধারণা LED-এর পূর্ণরূপ হল Light Emitting Diode । এটি একটি অর্ধপরিবাহী ডিভাইস যা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো নিঃসরণ করে। প্রচলিত ফিলামেন্ট বা গ্যাসভিত্তিক প্রযুক্তির চেয়ে এটি অনেক বেশি কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব। ১০০ ওয়াট LED বাল্ব: প্রাথমিক বিবরণ বৈশিষ্ট্য বিবরণ শক্তি ১০০ ওয়াট উজ্জ্বলতা ৮০০০–১০০০০ লুমেন রঙের তাপমাত্রা ২৭০০কে (উষ্ণ সাদা) থেকে ৬৫০০কে (দিনের আলো) আয়ু ২৫,০০০–৫০,০০০ ঘণ্টা ইনপুট ভোল্টেজ সাধারণত ৮৫-২৬৫ ভোল্ট ব্যবহৃত স্থান গুদামঘর, গ্যারেজ, স্টেডিয়াম, শিল্প কারখানা, বড় দোকান, রাস্তার আলো ইত্যাদি LED...